দিনাজপুরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা ফিরেছে নুরু নবীর গড়া শেখ রাসেল বিদ্যালয়ে

দিনাজপুরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা ফিরেছে নুরু নবীর গড়া শেখ রাসেল বিদ্যালয়ে , জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার পল্লীতে শিক্ষানুরাগী যুবক নুরু নবী নির্মাণ করেন শেখ রাসেল প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের কারণে এলাকার ঝরেপড়া শিশুরা ফের লেখা-পড়ায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

দিনাজপুরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা ফিরেছে নুরু নবীর গড়া শেখ রাসেল বিদ্যালয়ে

উপজেলার ৪নং ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.আসাদুজ্জামান ভুট্টু জানান, আজ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইদুরর রহমান খন্দকার। বিদ্যালয়ে পাঠদান ও ঝড়েপড়া শিশুদের সঙ্গে পাঠদানের আগ্রহ সৃষ্টির বিষয়ে কথা বলে তিনি নিজেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বিদ্যালয়টি যাতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন পায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।
জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাই জানান, উপজেলার ৪নং ইউনিয়নের তোষাই গ্রামের পল্লীতে শিক্ষিত যুবক নুরুনবী মিয়া, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নির্মাণ করে ।

দিনাজপুরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা ফিরেছে নুরু নবীর গড়া শেখ রাসেল বিদ্যালয়ে

 

 

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম তোষাই-জোড়গাড়ীতে এই বিদ্যালয়টি টিনের বেড়া দেয়া। বিদ্যালটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৮ জন। এই গ্রামের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় আর কোন সরকারি-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়াও পারিবারিক অভাব-অনটনসহ নানা কারণে আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা থেকে ঝরে পড়েছিলো।

ঠিক সেই সময় আলো ছড়াতে শুরু করে তোষাই গ্রামের শেখ রাসেল বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। গরিব ও অসহায় পরিবারের ঝরেপড়া শিশুরা ফিরতে শুরু করে বিদ্যালয়ের বারান্দায়। গত ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় যুবক নুরুনবী মিয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্নাসসহ মাস্টার্স শেষ করে তিনি বেছে নেন ফ্রিল্যান্সিং পেশা। নিজ গ্রামে কাজ করার সুবাদে ঝরেপড়া শিশুদের জন্য তিনি নিজস্ব জমিতে গড়ে তোলেন এই বিদ্যালয়টি।

শুরুর দিকে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ৫০ জন। বর্তমানে সেখানে সম্পুর্ণ বিনামূল্যে পড়াশুনা করছে ১২৮ জন শিশু। উপস্থিতির হার প্রায় ৮৫ শতাংশ। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা নুরুনবী ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জন করা অর্থের একটি অংশ ব্যয় করে এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে আসা শিশুদের পেছনে।

 

দিনাজপুরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা ফিরেছে নুরু নবীর গড়া শেখ রাসেল বিদ্যালয়ে

 

তিনি জানান, বিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৬ দিন খাবার পায় এখানে। তাদেরকে ৩ দিন বিস্কুট এবং ৩ দিন চকলেট দেয়া হয়। এছাড়াও প্রতিটি শিশু প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে উপবৃত্তি পায়। আর এই পুরো টাকা নিজেই বহণ করেন নুরুনবী তার ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে যে রোজগার হয় তা থেকে। তার এই ব্যক্তিক্রমী উদ্যোগে স্কুলমুখী হচ্ছে ঝরেপড়া শিশুরা।

জেলার হাকিমপুর উপজেলার হিলি-ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক সড়কের বলাহার বাজার থেকে ৫০০ মিটার ভিতরে বিদ্যালয়টির অবস্থান। গ্রাম ও ফসলী জমির বুকচিরে মেঠোপথ দিয়ে যেতে হয় এই স্কুলে। বিদ্যালয়টিতে টিনের চালাযুক্ত ৬টি শ্রেণীকক্ষ এবং একটি অফিস রুম রয়েছে। সবগুলো রুম টিনে ঘেরা। চালু রয়েছে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম।

 

দিনাজপুরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা ফিরেছে নুরু নবীর গড়া শেখ রাসেল বিদ্যালয়ে

 

শ্রেণীকক্ষের সাথেই পুকুর ঘেঁষা ছোট্ট একটি মাঠ। বিদ্যালয়টিতে মোট ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। তাদের মধ্য ৩ জনই নারী। বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী কাউসার ইসলামের মা বলেন, আমার গ্রামের পূর্বে কোন স্কুল ছিলো না। তাছাড়া অভাবের কারণে আমার বেটাক কোনদিন স্কুলেত পাঠাইনি। এই স্কুল হওয়ার পর গাঁয়ের সব ছোলপোল স্কুলে যায়। সকাল বেলা যাওয়ার কথা বলতে লাগে না।  চকলেট আর বিস্কুটের লোভে ছেলেরা নিজেরাই স্কুলেত যায়।

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা নুরুনবী মিয়া বলেন, ‘গ্রামের শিশু ও তরুণদের শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া দেখে আমি এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করি। শিক্ষকদের বেতন ও শিক্ষার্থীর খাবারসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু ফ্রিল্যান্সিং থেকে যে রোজগার হয় সেখান থেকে আমি নিজে বহন করি। বিদ্যালয়টির পেছনে প্রতিমাসে আমার খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে কিছু লোক প্রতি মাসে তাকে সহায়তা করে। বিদ্যালয়টি নির্মাণ করার পর থেকে শিশুরা বাড়িতে বসে না থেকে নিয়মিত স্কুলে আসছে। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য আবেদন করেছি।

আরও দেখুন: